গ্রিন টি আসলেই করোনা, রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, ক্যান্সার প্রতিরোধ করে?
গ্রিন টি আসলেই করোনা, রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, ক্যান্সার প্রতিরোধ করে?
গ্রিন টি কী?
গ্রিন টি বলতে আমরা অনেকে এর সবুজ রংকে বুঝি। কিন্তু আসলেই তা নয়। সাধারণ চায়ের ক্ষেত্রে যেমন অনেক প্রক্রিয়াজাত করে একেক দানাদার আকার দেওয়া হয়, তবে গ্রিন টির ক্ষেত্রে বেশিরভাগই তা করা হয় না। এটি প্রক্রিয়াজাতকরণের ধরন সাধারণ চায়ের চেয়ে আলাদা। অনেক ক্ষেত্রে ছোট ছোট আস্ত পাতাই থেকে যায়।
জাপান এবং চীনের মতো পৃথিবীর অন্য দেশেও স্বাস্থ্যগত সুবিধার কথা বিবেচনা করে ধীরে ধীরে গ্রিন টি’র জনপ্রিয়তা বাড়ছে। অন্য চায়ের চেয়ে গ্রিন টি দ্রুত সংরক্ষণ করা যায়। গ্রিন টি’র প্রক্রিয়াজাতকরণের এই পার্থক্যের জন্যই এটি সর্বোচ্চ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ধরে রাখতে পারে।
গ্রিন টিতে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট, যা সব দিক থেকে শরীর চাঙা রাখে। এটি রোগপ্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়ায়, ক্যানসার প্রতিরোধ করে, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে বলে প্রচলিত। এ ছাড়া ক্যাটেচিন নামের একটি উপাদান থাকে এই চায়ে, যা ভিটামিন ই এবং সির থেকেও বেশি শক্তিশালী, যা শরীরে একাধিক উপকার করে। গ্রিন টি পলিফেনল ও ফ্লাভনয়েডের মতো অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টে পরিপূর্ণ যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্যের জন্য দারুণ উপকারী।
গ্রিন টির উপকারিতা
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
গ্রিন টিতে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট, যা সব দিক থেকে শরীর চাঙা রাখে। এটি রোগপ্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়ায় । এটি দেহের সকল রোগ প্রতিরোধে সহায়ক। সবুজ চা দেহকোষকে ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করে, ফলে বাড়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা।
করোনা প্রতিরোধে
সম্প্রতি এক গবেষণায় পাওয়া গেছে যে করোনা (corona) প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে গ্রীন টি। “RSC Advances” নামক জার্নালে (Journal) প্রকশিত হয়েছে এই গবেষণা রিপোর্ট। গবেষণা অনুযায়ী গ্রীন টিতে গ্যালোকাটেকিন (Gallocatechin) নামক একটি উপাদান পাওয়া যায় যা করোনা প্রতিরোধকারী ওষুধ তৈরিতে কাজে লাগে।
সোয়ানসি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন গবেষক ড: সুরেশ মহানকুমার বলেন ” প্রকৃতি থেকে পাওয়া বিভিন্ন উপাদান থেকে ওষুধ তৈরী দীর্ঘদিন ধরেই হয়ে আসছে। এবং আমাদের মনে হয়েছে যে সেই উপাদান গুলো থেকে কী মারণ করোনা ভাইরাসের কোনো ওষুধ তৈরী করা সম্ভব? গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল আমাদের জানিয়েছে গ্রীন টিতে থাকা গ্যালোকাটেকিন (Gallocatechin) নামক উপাদান করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ করতে পারে। এবং এই উপাদানটি ক্লিনিকাল টেস্টের মাধ্যমে প্রমাণ করতে হবে যে কীভাবে এই উপাদান করোনা উপসম করতে কাজে লাগে।” বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিষয়ের প্রধান প্রফেসর অ্যান্ড্রু মরিস বলেন ” এই গবেষণা থেকে বোঝা যাচ্ছে যে প্রাকৃতিক উপাদান কীভাবে এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে আমাদের সাহায্য করছে। “
ওজন কমাতে
সবুজ চা বিপাক বৃদ্ধি করে। শরীরের বিভিন্ন অংশের অতিরিক্ত মেদ ঝরিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে গ্রিন টি গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
গ্রীন টি পলিফেনল শরীরের ফ্যাট অক্সিডেশন প্রক্রিয়াকে আরও কার্যকর করে খাবার থেকে ক্যালরি তৈরি প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে। ফলে দেহে অতিরিক্ত চর্বি জমতে পারে না। একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, এটি এক দিনে ৭০ কালরি পর্যন্ত ফ্যাট বার্ন করে। তার মানে নিয়মিত গ্রীন টি পানের মাধ্যমে বছরে ৭ পাওন্ড পর্যন্ত ওজন কমানো সম্ভব।
রক্ত চাপ কমাতে
গ্রীন টি রক্তচাপের ঝুকি কম করতে অনেক সহায়ক। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নিয়মিত গ্রিন টি পান করলে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমে যাবে। সুতরাং উচ্চ রক্ত চাপের ক্ষেত্রে গ্রিন টি অনেক উপকারি।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে
যদি গ্রীন টি রোজ পান করা যায় তাহলে ডায়াবেটিসের মত রোগকে নিয়ন্ত্রনে রাখা যায়। সবুজ চা রক্তের গ্লুকোজ এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। খাওয়ার পরে রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ে, যা প্রত্যক্ষভাবে নিয়ন্ত্রণ করে গ্রিণ টি।
হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে
বিজ্ঞানীরা মনে করেন, গ্রিন টি শরীরের প্রতিটি শিরায় কাজ করে। ফলে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকে। তাই কোনো কারণে রক্ত চাপে পরিবর্তন হলেও কোন ধরনের ক্ষতি করে না। তাছাড়া গ্রীন টি রক্ত জমাট বাধতে দেয় না। ফলে হার্ট অ্যাটাক হওয়ার সম্ভবনা অনেক কমে যায়। বিভিন্ন স্টাডি থেকে দেখা গেছে যে যাঁরা প্রতিদিন ১ কাপ গ্রীন টি খান তদের তুলনায় যাঁরা প্রতিদিন ৫ কাপ গ্রীন টি খান তদের হার্ট অনেক বেশি ফিট।তদের কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ হবার সুজোগ খুবই কম।
ক্যান্সার রোধে
গ্রীন টির সবথেকে বড় গুণ হল এটি যেকোনো ধরনের ক্যানসার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।যেমন স্কিন ক্যানসার,ব্রেস্ট ক্যানসার,লাঙ ক্যানসার,লিভার ক্যানসার,গলব্লাডার ক্যানসার,প্রস্টেট ক্যানসার ইত্যাদি ।
গ্রীন টিতে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ভিটামিন সি এর চাইতে ১০০ গুন ও ভিটামিন ই এর চাইতে ২৪ গুন ভালো। গ্রীন টি বিশেষ ভাবে ত্বকের ও খাদ্যনালীর ক্যান্সারের চিকিৎসা ও প্রতিরোধে ব্যবহৃত হয়। এ
ত্বক ও চুল কে সুন্দর রাখে
গ্রীন টি ত্বক ও চুল কে সুন্দর রাখতেও ভীষণ ভাবে উপকারী।শুধু সুন্দর নয় বিভিন্ন ত্বকের সমস্যা যেমন ব্রণ,প্যাচি স্কিন,ত্বক ফেটে যাবার সমস্যা এছাড়াও খুশকির মত সমস্যা যেটা থেকে মুক্তি পাওয়া খুব কঠিন সেটি থেকেও মুক্তি দেয় এই গ্রীনটি।
কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে
গ্রিন টি শরীরের ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস করতে সাহায্য করে। পাশাপাশি প্রয়োজনীয় উপকারী কোলেস্টেরলের পরিমাণও বাড়াতে সাহায্য করে।
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে
গ্রীন টির আরেকটি অসাধারণ গুণ হল এটি আমদের ব্রেন কে সঠিক ভাবে পরিচালিত করতে সাহায্য করে ।এটি ব্রেনে রক্ত সঞ্চালনকে ঠিক রাখে। তারফলে ব্রেন দ্রুত কাজ করে।
অ্যান্টি-ভাইরাল এবং ব্যাকটেরিয়া বিরোধী
গ্রিন টিতে থাকা কেটচিনগুলিও ওরাল স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী রয়েছে।টেস্ট-টিউব সমীক্ষায় পরামর্শ দেওয়া হয় যে ক্যাটচিনগুলি ব্যাকটিরিয়ার বৃদ্ধি দমন করতে পারে, সংক্রমণের ঝুঁকি সম্ভাব্যভাবে হ্রাস করে।গ্রিন টিতে থাকা ক্যাটচিনগুলি মুখের ব্যাকটেরিয়াগুলির বৃদ্ধি বাধা দিতে পারে, যাতে মুখে দুর্গন্ধের ঝুঁকি হ্রাস হয়।
গ্রিন টির অপকারিতা কী?
- গ্রিন টি অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টে পরিপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও দিনে ৩ কাপের বেশি খাওয়া উচিত নয়। এর বেশি গ্রিন টি খেলে শরীর ডিহাইড্রেটেড হয়ে যেতে পারে। বেশি পরিমাণ গ্রিন টি শরীর থেকে প্রয়োজনীয় উপাদান বের করে দিতে পারে।
- খাবার খাওয়ার আগে বা পরে গ্রিন টি খাওয়া ঠিক নয়। এতে হজমের সমস্যা দেখা দেয়।
- আর ঘুমাতে যাওয়ার আগে তো গ্রিন টি একদমই খাওয়া ভাল না। এতে করে আরামের ঘুম হারাম হয়ে যাবে।
- গ্রিন টিতে থাকা ক্যাফিন রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। আপনার যদি রক্তক্ষরণের ব্যাধি থাকে তবে গ্রিন টি পান করবেন না।
গ্রিন টি কখন খাওয়া সবচেয়ে উপকারী?
সকালে মেটাবলিজমের মাত্রা সবচেয়ে বেশি থাকে। তাই সকালে উঠে গ্রিন টি খুবই উপকারী। আবার সন্ধেবেলা যখন আমাদের মেটাবলিজমের মাত্রা কমে যায় তখন গ্রি টি মেটাবলিজম মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। গ্রিন টি খাওয়ার সবচেয়ে উপযুক্ত সময় সকাল ১০-১১টা মধ্যে বা সন্ধেবেলা।
কীভাবে গ্রিন টি তৈরি করবেন?
পানির সঠিক তাপমাত্রা পারফেক্ট গ্রিন টি তৈরি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পানি যদি বেশি গরম হয় তবে এর স্বাদ তেতো হয়ে যাবে, সাথে এটি তার সুবাস হারাবে। গ্রিন চা তৈরির সবচেয়ে উপযুক্ত তাপমাত্রা হচ্ছে ৭৫-৮০ ডিগ্রী।