Uncategorized

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কেন সরাসরি পিএইচডিতে ভর্তি হতে পারবেন না-বিতর্কে সরব শিক্ষাঙ্গন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক (সম্মান) এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনকারীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি প্রোগ্রামে সরাসরি ভর্তি হতে পারবেন না। পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তির আগে তাঁদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমফিল প্রোগ্রামে ভর্তি হতে হবে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমফিল ডিগ্রিধারীদের আবেদনপত্র সংগ্রহের আগে ডিগ্রির সমতা নিরূপণের জন্য দরখাস্ত করতে হবে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশে উচ্চ শিক্ষা নিচ্ছেন এমন ৬৩ শতাংশ শিক্ষার্থীই পড়ছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে।

উল্লেখিত বিজ্ঞপ্তির আলোকে সহজেই প্রশ্ন আসতে পারে যে,

  • বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ দ্বারা পরিচালিত হয়। সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অনুমোদন সাপেক্ষেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের বিভিন্ন কোর্স পরিচালনা করে। সরকার স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে পাস করে তাঁরা কেন সরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সরাসরি পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তি হতে পারবেন না, তার কোনো ব্যাখ্যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দেয়নি।
  • তাছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে সন্ধ্যকালীন স্নাতকোত্তর এবং এমবিএ প্রোগ্রামগুলো চলছে সেখানকার বেশির ভাগ শিক্ষার্থী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক (সম্মান) করে এসে ভর্তি হয়ে থাকেন। এসব প্রোগ্রাম নিয়ে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ যে ক্লাস ঠিকমতো না নেওয়া হলেও অস্বাভাবিক টিউশন ফি নেওয়া হয়। এসব প্রোগ্রামে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতে পারলে কেন পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তি হতে পারবেন না। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি প্রোগ্রামে দুই ধরনের নিয়ম কেন থাকবে?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই বিজ্ঞপ্তি নিয়ে নেট দুনিয়ায় তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য একে ‘নিজস্ব নিয়ম’-এর কথা বলে সমর্থন করলেও অন্য শিক্ষাবিদেরা ‘অন্যায়’ বলে অভিহিত করেছেন।

‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিয়মিত জন হপকিন্স, ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুর–এসব ছোটখাটো বিশ্ববিদ্যালয়ে এমফিল ছাড়া পিএইচডিতে ভর্তি হতে পারেন।’- গতকাল ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডিতে ভর্তির বিজ্ঞপ্তি বিষয়ে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মেহেদী রহমান চৌধুরী।

‘কোনো স্টুডেন্ট যোগ্য কি যোগ্য না, সেটা বিবেচনা না করে, ঢালাওভাবে নিয়ম করে দেওয়া হলো। এটা হলো রাষ্ট্রীয় রেসিজম। ভাবতে লজ্জা লাগে, দেশের সবচেয়ে প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয় সেটা করতে পারে।’-বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী গবেষক রউফুল আলম।

কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তপক্ষ এ বিষয়ে বলেন যে, বিশ্ববিদ্যালয় তার নিজস্ব নিয়মে এ সিদ্ধান্ত দিয়েছে। এ সিদ্ধান্ত নতুন কোনো বিষয় নয়। একাডেমিক কাউন্সিল মিটিংয়ের মাধ্যমে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ সিদ্ধান্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলমান রয়েছে।

যদিও একই বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ রকম সিদ্ধান্তকে আমি অন্যায় মনে করি। এ সিদ্ধান্ত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রতি লিখিতভাবে বিমাতাসুলভ আচরণ। এ রকম বর্ণবাদী আচরণ কি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মানায়? অনেক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিশ্ব র‍্যাঙ্কিংয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করতে যাচ্ছেন।’

অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন আরও বলেন, ‘বিদ্যমান নিয়মেই আছে যে শিক্ষক পিএইচডি করাবেন সে শিক্ষক, যেই বিভাগে পিএইচডি করবে সে বিভাগের একাডেমিক কমিটি এবং সেই অনুষদের পিএইচডি কমিটি মূল্যায়ন করবে। তার জন্য পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তির আগে তাঁদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমফিল প্রোগ্রামে ভর্তি হতে হবে।

বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রায় সব বেসরকারি। আমেরিকাও এর ব্যতিক্রম নয়। দেশটির তিন সেরা বিশ্ববিদ্যালয়- এমআইটি, হার্ভার্র্ড ও স্ট্যানফোর্ড বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানকার সরকারি
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থী বেশি, বেতন কম। কিন্তু পড়াশোনার মান বেশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে।

তবে আমাদের বেশ কয়েকটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় এখন সুনামের সাথে শিক্ষা দিচ্ছে। ভালো মানের শিক্ষার্থী তৈরি করছে। তাছাড়া বেশ কয়েকটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় বর্তমানে ঢাবি ও বুয়েটের পাশাপাশি World University Ranking এ স্থান পাচ্ছে।