করোনা ভাইরাস

স্যানিটাইজারের চেয়ে সাবান পানিই ভালো

Corina-Soap and Waterকরোনাভাইরাস সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশের মানুষকেও উৎকণ্ঠায় ফেলেছে। মানুষ প্রতিরোধের পথ খুঁজছে। সংক্রমণ এড়াতে চাইছে সবাই। হাত পরিষ্কার রাখা সংক্রমণ থেকে দূরে থাকার একটি প্রধান উপায়। বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা বলছেন, করোনাভাইরাস দমনে সাবানই যথেষ্ট।

বিতর্ক বা আলোচনা শুরু হয়েছে, হঠাৎ করে বাজার থেকে হাত পরিষ্কার করার দ্রবণ হ্যান্ড স্যানিটাইজার উধাও হয়ে যাওয়া এবং দাম বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে। ৮ মার্চ সরকার ঘোষণা করে, দেশে কোভিড–১৯–এ আক্রান্ত তিনজন শনাক্ত হয়েছে। তখন থেকেই হ্যান্ড স্যানিটাইজার কিনতে তোড়জোড় শুরু করে লোকজন। সরকারের ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর বাধ্য হয়ে এর দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। বলেছে, বেশি দামে বিক্রি করা যাবে না।

সাধারণ মানুষের কাছে হ্যান্ড স্যানিটাইজার খুব বেশি পরিচিত জিনিস নয়। এই দ্রবণে অন্যান্য রাসায়নিকের সঙ্গে অ্যালকোহলও থাকে। তালুতে ঢেলে ঘষলেই কিছুক্ষণ পর তা শুকিয়ে যায়। হাত জীবাণুমুক্ত করার জন্য মূলত চিকিৎসকেরাই এটা নিয়মিত ব্যবহার করেন। নার্সসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীও তা ব্যবহার করেন। যাঁরা পরীক্ষাগারে কাজ করেন, তাঁরাও এটা নিয়মিত ব্যবহার করেন। তাঁদের বাইরে আরও অনেকে ব্যবহার করছেন হ্যান্ড স্যানিটাইজার।

See also  করোনায় কেড়ে নিল আরো ১৭৮ জনের প্রাণ, নতুন শনাক্ত ৮ হাজার ৪৬৫ জন

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, হাতে নোংরা দৃশ্যমান হলে সাবান-পানি দিয়ে ধুতে হবে। হাতের নোংরা দৃশ্যমান না হলে অ্যালকোহলসমৃদ্ধ হ্যান্ড রাব (হ্যান্ড স্যানিটাইজার) অথবা সাবান-পানি দিয়ে বারবার হাত ধুতে হবে।

দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিশ্চিত হওয়ার পর হ্যান্ড স্যানিটাইজার নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। যাঁরা কোনো দিন ব্যবহার করেননি, তাঁরাও ব্যবহার করতে চাইছেন। অনেকে ভাবছেন, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ছাড়া দুহাত করোনাভাইরাসমুক্ত করা যাবে না।

করোনাভাইরাস–বিষয়ক জাতীয় সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এ বি এম আব্দুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাবান–পানি দিয়ে হাত ধোয়াই যথেষ্ট। সাবান দিয়ে ২০ সেকেন্ড হাত ধুলে ভাইরাস মারা যায়।’ তিনি বলেন, হ্যান্ড স্যানিটাইজারের পেছনে দৌড়াদৌড়ি না করে মানুষ নিশ্চিন্তে সাবান ব্যবহার করতে পারে।

See also  কুমিল্লায় করোনায় আরও ৫ জনের মৃত্যু, নতুন শনাক্ত ৩৪৬ জন

এ বিষয়ে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোশতাক আহমেদ বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাটি দিয়েছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, করোনাভাইরাসের ওপরের আবরণ চর্বি (লিপিড) দিয়ে তৈরি। সাবানে আছে ক্ষার। চর্বি যখন ক্ষারের সংস্পর্শে আসে, তখন চর্বি ভেঙে টুকরা টুকরা হয়ে যায়। সাবানের সংস্পর্শে আসার সঙ্গে সঙ্গে করোনাভাইরাসের ওপরের আবরণ নষ্ট হয়ে যায়, ভাইরাস মরে যায়। সাবানে ক্ষার যত বেশি থাকে, ভাইরাস তত দ্রুত মরে। সে জন্য কাপড় কাচা সাবানই এ ক্ষেত্রে শ্রেয়। তিনি আরও বলেন, ‘হ্যান্ড স্যানিটাইজারের জন্য হাপিত্যেশ করার দরকার নেই। সাবানই যথেষ্ট। সাশ্রয়ী, দেশের সব জায়গায় পাওয়া যায়।’

See also  জনসনের দাবি তাদের ভ্যাকসিন ‘ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট’ প্রতিরোধে সক্ষম

একই কথা বলেছে যুক্তরাষ্ট্রের রোগনিয়ন্ত্রণ–বিষয়ক প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)। প্রতিষ্ঠানটি তাদের ওয়েবসাইটে বলেছে, কিছু জীবাণু মারতে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের চেয়ে সাবান–পানি বেশি কার্যকর। হ্যান্ড স্যানিটাইজার জীবাণুর পরিমাণ হয়তো কমিয়ে আনতে পারে। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ মেরে ফেলতে পারে না।

সূত্র: প্রথমআলো, ২৬/৩/২০২০

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *