Football

নেইমার, কিলিয়ান এমবাপ্পেরা বর্ণবাদের প্রতিবাদে মাঠ ছাড়লেন!

সফটওয়্যারে একদিনে সব স্কুলে ভর্তিতে লটারিবর্ণবাদের অভিযোগে চ্যাম্পিয়নস লিগের একটি ম্যাচ শেষ না করেই নজিরবিহীনভাবে মাঠ ছেড়েছেন প্যারিস সেইন্ট-জার্মান ও ইস্তানবুল বাসাকশেহেরির খেলোয়াড়রা। ম্যাচের চতুর্থ রেফারি কথাটা বলেছিলেন ইস্তাম্বুল বাশাকশেহিরের সহকারী কোচের উদ্দেশে।
১৪তম মিনিটে বাশাকশেহিরের সহকারী কোচ ও সাবেক ক্যামেরুন ফরোয়ার্ড পিয়ের ওয়েবোকে দেখাতে গিয়ে চতুর্থ রেফারি সেবাস্তিয়ান কোলতেসকু ওই কালো লোকটা বলে সম্বোধন করেন।

সেটি বুঝতে পেরেই রেগে যান ওয়েবো। সে কালো লোক বলতে পারে না বলে চেঁচাতে থাকেন! সে সময়ে বাশাকশেহিরের বেঞ্চে থাকা সেনেগালিজ স্ট্রাইকার ডেম্বা বা রেফারির কাছে কৈফিয়ত চান।

টিভিতে শোনা যায়, তিনি ইংরেজিতে বলছেন, আপনি যখন কোনো ফরসা ব্যক্তিকে ডাকেন, তখন তো বলেন না– ওই যে সাদা লোকটা। আপনি তখন বলেন, ওই লোকটা। তাহলে কালো ব্যক্তির ক্ষেত্রে কেন কালো লোকটা বলছেন? কোলতেসকু তখন বলেন, আমরা একে অন্যের সঙ্গে রোমানিয়ান ভাষায় কথা বলছিলাম।
কিন্তু বর্ণবাদী মন্তব্যে তো আর ব্যক্তি বা দল গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার নয়, বর্ণবাদের প্রতিবাদ করাই মুখ্য। সেটিই করেছেন নেইমার, কিলিয়ান এমবাপ্পেরা।
প্রতিপক্ষ বাশাকশেহিরের কোচের প্রতি রেফারির করা বর্ণবাদী মন্তব্যের প্রতিবাদে তুরস্কের ক্লাবটির খেলোয়াড়েরা তো মাঠ ছেড়েছেনই, মাঠ ছেড়েছেন নেইমার-এমবাপ্পেসহ পিএসজির সব খেলোয়াড়ও। ওই রেফারি ম্যাচের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকলে খেলবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন।

পিএসজির মাঠে কাল পিএসজি-বাশাকশেহিরের ম্যাচটা ১৪ মিনিটে বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর আর শুরু হয়নি। ম্যাচ তখনো গোলশূন্য ছিল। আজ বাংলাদেশ সময় রাত ১১টা ৫৫ মিনিটে একই মাঠে ১৪তম মিনিট থেকেই খেলা শুরু হবে, তবে রেফারি থাকবেন ভিন্ন।

“বাশাকশেহিরের খেলোয়াড়েরা তো প্রতিবাদ করেনই, পিএসজির খেলোয়াড়েরাও প্রতিবাদ করেন ঘৃণিত এই কথার। কিলিয়ান এমবাপ্পে তখন বলেন, ‘চতুর্থ রেফারি যদি এটা বলে থাকেন, তাহলে তাঁকে সরে যেতে হবে।’ পিএসজি ডিফেন্ডার প্রেসনেল কিমপেম্বে জানিয়ে দেন, ‘তিনি সত্যিই এটা বলেছেন? তাহলে আর কথা নয়! আমরা ড্রেসিংরুমে চলে যাচ্ছি।’ মিনিট দশেক বচসার পর দুই দলের খেলোয়াড়েরা মাঠ ছেড়ে যান।”

স্প্যানিশ দৈনিক এএস জানাচ্ছে, এ নিয়ে রেফারি ও দুই দলের মধ্যে যখন পরিস্থিতি শান্ত করে খেলা মাঠে ফেরানোর চেষ্টা চলছে, তখন নেইমার ও এমবাপ্পে যান রেফারির কাছে। নেইমার সোজা জানিয়ে দেন, ‘আমরা এই রেফারির অধীনে খেলব না।’ এমবাপ্পেও তাঁর সঙ্গে একমত পোষণ করেন, ‘এই চেহারাটা সরে না যাওয়া পর্যন্ত আমরা খেলব না।’

উয়েফার নিয়মে সাধারণত কোনো ক্লাব খেলতে অস্বীকৃতি জানালে তাদের ৩-০ গোলে হার মেনে ম্যাচ পরিত্যক্ত করতে হয়, ওই ক্লাবকে ২ লাখ ৫০ হাজার ইউরো জরিমানাও করতে হয়। কিন্তু কালকের ঘটনাটা অন্য রকম। উয়েফা জানিয়েছে, ‘অনন্য একটা সিদ্ধান্তে বুধবার (আজ) ভিন্ন এক দল রেফারির অধীনে ম্যাচটার বাকি থাকা সময় খেলা হবে।’ এ ঘটনায় তদন্ত করা হবে বলেও বিবৃতিতে জানিয়েছে উয়েফা।

“মাঠের ঘটনা অবশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে সময় লাগেনি। নেইমার টুইট করেছেন, ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার।’ এমবাপ্পের টুইট, ‘বর্ণবাদকে “না” বলুন। মি. ওয়েবো, আমরা আপনার পাশে আছি।’ উয়েফার বর্ণবাদবিরোধী স্লোগানের লোগোর ছবি দিয়ে ‘বর্ণবাদকে “না” বলুন’ টুইট করেছে বাশাকশেহির। সেটি রিটুইট করেছে পিএসজিও”

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান-বাশাকশেহিরের মালিকপক্ষের সঙ্গে যাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক, তিনি টুইট করেছেন, ‘বাশাকশেহিরের কোচ পিয়ের ওয়েবোর প্রতি করা বর্ণবাদী মন্তব্যে তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমি নিশ্চিত, উয়েফা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।’

বাশাকশেহিরের সভাপতি গোকসেল গুমুসদাগ তুর্কি চ্যানেল টিআরটি স্পোরে বলেছেন, ‘চতুর্থ রেফারি সবার সামনে “নিগ্রো” শব্দটা ব্যবহার করেছে। মাঠ থেকে এই রেফারিকে সরানো হলেই কেবল আমরা মাঠে নামব।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *