Dengue Fever

ডেঙ্গুজ্বরে রক্তে প্লাটিলেট কমে গেলে প্লাটিলেট বাড়াতে কী খাবেন

প্লাটিলেট বাড়াতে কী খাবেন

ডেঙ্গুজ্বরে রক্তে প্লাটিলেট কমে গেলে প্লাটিলেট বাড়াতে কী খাবেন

প্লাটিলেট হলো রক্তের কোষ, যা রক্তকে জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। একজন সুস্থ মানুষের প্রতি ১০০ মিলিমিটার রক্তে প্লাটিলেটের মাত্রা দেড় থেকে চার লাখ থাকা উচিত। প্লাটিলেটের ওপর নির্ভর করে মানুষের সুস্থ থাকা। আর তাই শরীরে প্লাটিলেটের অভাব হলে সহজে ক্লান্ত হয়ে যেতে পারেন। খুব সহজে আঘাত পাওয়ার আশঙ্কা থাকে। নিয়মিত ভিটামিন বি১২ খেলে শরীরে প্লাটিলেটের পরিমাণ বাড়ে। যেকোনো আমিষ খাবারেই এই ভিটামিন বি১২ প্রচুর পরিমাণে থাকে।

ডেঙ্গুর কারণে এই প্লাটিলেটের মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে কমে যেতে পারে। জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভ্যাসে কিছু পরিবর্তনের মাধ্যমে এই প্লাটিলেটের মাত্রা আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যায়। রক্তে কমে যাওয়া প্লাটিলেটের পরিমাণ আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে কিছু খাবারের বিশেষ ভূমিকা আছে।

প্লাটিলেট কমে যাওয়ার লক্ষণ

  • শরীরের যেকোনো স্থান থেকে সূক্ষ্ম রক্তপাত, যা পিনপয়েন্টের আকারে দেখা দেয়। ত্বকে বেগুনি রঙের চিহ্ন দেখা যায়। কারণ ত্বকের নিচে রক্তক্ষরণ হয়।
  • মাসিকে অতিরিক্ত রক্তপাত হওয়া।
  • মাড়ি বা নাক থেকে রক্তপাত হতে পারে।
  • প্রস্রাব বা মলের সঙ্গে রক্তপাত।
  • শরীরের কোথাও কাটলে অনেকক্ষণ ধরে রক্তপাত হয়।

ডেঙ্গজ্বর হলে করণীয়

ডেঙ্গজ্বর হলে প্লাটিলেট কত তা ঘন ঘন না দেখে বরং রোগীর অন্যান্য বিষয়ে লক্ষ্য রাখুন। যেমন- রক্তচাপ ঠিক আছে কিনা, রোগী পানিশূন্যতায় ভুগছে, রক্তের পিসিভি বা হেমাটোক্রিট কেমন তা দেখা উচিত। যদি এমনটি হয় তাহলে পর্যাপ্ত তরল দিন বা ফ্লুইড কারেকশন করুন, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন। প্রয়োজন হলে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে। দেরিতে হাসপাতালে আসলে মৃত্যুঝুঁকি বাড়ে।

প্লাটিলেটের পরিমাণ বেড়ে গিয়েও দেখা দেয় হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোকসহ রক্তজমাট বেঁধে যাওয়ার মতো বিপত্তি। যদিও এমন কিছু খুব একটা দেখা যায় না।

প্লাটিলেটের পরিমাণ কমে গেলে ত্বকের নিচে এক ধরনের রক্তক্ষরণ হয়ে থাকে। ত্বকে ছোট ছোট লাল রঙের র‌্যাশ, দাঁতের গোড়া থেকে রক্তক্ষরণ, নাক ও গলা থেকে রক্তক্ষরণ।

প্লাটিলেট বাড়াতে কী খাবেন

পেঁপে ও পেঁপের পাতা
গবেষণায় দেখা গেছে, পেঁপে পাতার রস ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর রক্তে কমে যাওয়া প্লাটিলেটের পরিমাণ দ্রুত বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। পাকা পেঁপের জুসও প্লাটিলেটের পরিমাণ বাড়াতে পারে। এ জন্য কারও রক্তে প্লাটিলেটের পরিমাণ কমে গেলে তাঁকে প্রতিদিন তাজা পেঁপে পাতা বেটে রস বের করে ১ চামচ করে দুই বেলা খাওয়ানোর পাশাপাশি পাকা পেঁপের জুসও খেতে দিতে পারেন।

মিষ্টিকুমড়া ও কুমড়ার বীজ
মিষ্টিকুমড়ায় রয়েছে রক্তে প্লাটিলেট তৈরির উপাদান ভিটামিন ‘এ’। রক্তে প্লাটিলেটের পরিমাণ বাড়াতে তাই নিয়মিত মিষ্টিকুমড়া খেতে পারেন। মিষ্টিকুমড়ার বীজেও রয়েছে প্লাটিলেট বৃদ্ধিকারী উপাদান। তাই ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার কারণে রক্তে প্লাটিলেট কমে গেলে তাঁকে নিয়মিত মিষ্টিকুমড়া ও মিষ্টিকুমড়ার বীজ খেতে দিন।

পালংশাক
ভিটামিন কে–সমৃদ্ধ খাবার প্লাটিলেট বাড়াতে সাহায্য করে। তাই ভিটামিন কে–সমৃদ্ধ খাদ্য হিসেবে আপনি পালংশাককে বেছে নিতে পারেন। এতে ফোলেটও রয়েছে, যা প্লাটিলেট এবং কোষের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

ডালিম
ডেঙ্গু রোগীর খাদ্যতালিকায় অবশ্যই ডালিম রাখতে হবে। এটি প্লাটিলেটের সংখ্যাকে আর কমতে দেয় না এবং যা কমেছে তা দ্রুত পূরণ করে। তাই ডেঙ্গু শনাক্ত হলেই প্রতিদিন ডালিম খাওয়া উচিত, যার ফলে প্লাটিলেটের কমে যাওয়া এড়ানো সম্ভব হবে। ডালিমে প্রচুর পরিমাণে আয়রন রয়েছে। এছাড়া এতে রোগ নিরাময়ের অন্যান্য উপাদানও আছে।

আমলকী
আমলকীতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন ‘সি’ ও অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট। ডেঙ্গু রোগীরা নিয়মিত আমলকী খেলে তাদের রক্তের প্লাটিলেট ধ্বংস হওয়া থেকে রক্ষা পাবে। সেই সঙ্গে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।

কমলা
কমলাতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি আছে।ভিটামিন সি শরীরে প্লাটিলেটের উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করে।ভিটামিন সি সমৃদ্ধ অন্যান্য খাবারও ডেঙ্গু রোগীর জন্য সহায়ক হতে পারে, যেমন- লেবু, আমলকি, কাঁচামরিচ ও ক্যাপসিকাম।

লেবুর রস
লেবুর রসে থাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, যা রক্তে প্লাটিলেটের পরিমাণ বাড়াতে খুবই সহায়ক। এ ছাড়া এতে থাকা ভিটামিন ‘সি’ প্লাটিলেটকে ধ্বংস হওয়া থেকে রক্ষা করে, রোগ প্রতিরোধেও ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। তাই ডেঙ্গু রোগীকে লেবু শরবত খাওয়ানো উচিত।

বিটের রস
বিটের রস মুক্ত র‍্যাডিকেলের হাত থেকে শরীরকে রক্ষা করে এবং ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে দ্রুত প্লাটিলেট বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। তাই বিটের রস খেতে পারেন।

অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারীর রস
অ্যালোভেরার রয়েছে রক্তকে বিশুদ্ধ করার ক্ষমতা। রক্তে যেকোনো জীবাণুর সংক্রমণ রোধ করতেও অ্যালোভেরা কার্যকরী। তাই রক্তের প্লাটিলেটের পরিমাণ বাড়াতে ডেঙ্গু রোগীকে নিয়মিত অ্যালোভেরার জুস পান করাতে পারেন।

হলুদ
রান্নাঘরের একটি উপাদান হলো হলুদ, যা চিকিৎসায় যুগ যুগ ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ডেঙ্গু জ্বর হলে এক গ্লাস দুধের সঙ্গে এক চিমটি হলুদ মিশিয়ে পান করুন। প্লাটিলেট কাউন্ট বাড়বে হলুদ খেলে।

মেথি
মেথি সবার ঘরেই নিশ্চয় আছে! ডেঙ্গু হলে অতিরিক্ত মাত্রার জ্বর কমাতে সাহায্য করে এই উপাদানটি। তবে মেথি গ্রহণ করার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরমার্শ নিতে হবে।

ব্রোকলি
ব্রোকলি হলো ভিটামিন কে’র একটি ভালো উৎস। অন্যদিকে ভিটামিন কে রক্তের প্লেটলেট বাড়াতে সহায়তা করে। যদি কোনো ব্যক্তি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন, তাহলে অবশ্যই তাকে ব্রোকলি খাওয়াতে হবে।

কিউই ফল
কিউই ফলেও প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন পাওয়া যায়। একই সঙ্গে এতে থাকে পটাশিয়াম। এ ফল খেলে ইলেক্ট্রোলাইট স্তর ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। এমনকি কিউই খেলে শরীরে লোহিত রক্ত কণিকার মাত্রাও বৃদ্ধি পায়।

বেদানা
শরীরের প্রয়োজনীয় শক্তি যোগাতে দরকারি খনিজ উপাদানসহ নানা পুষ্টি রয়েছে বেদানায়। দুর্বল শরীরের ধকল কাটিয়ে উঠতে বেদানা খুবই উপকারী। পাশাপাশি আয়রন আছে বলে রক্তের জন্য এটা উপকারী। ডেঙ্গুজ্বর সারাতে ও প্লাটিলেটের সংখ্যা নরমাল রাখতে এটা উপকারী।

ডাবের পানি
শারীরিক সুস্থতায় ডাবের পানি অনেক উপকারী। ডেঙ্গু জ্বর হলে শরীরে তরল পদার্থের শূন্যতা থেকে সৃষ্টি হয় ডিহাইড্রেশন। এ সময় বেশি করে ডাবের পানি পান করুন। এতে থাকে ইলেক্ট্রোলাইটসের মতো প্রয়োজনীয় পুষ্টি।

খেয়াল রাখা জরুরি
ডেঙ্গু রোগীর হজমশক্তি অনেকাংশে কমে যায় বলে বমি ও পেটব্যথা হতে পারে। রোগীর যকৃতে অস্বাভাবিকতা সৃষ্টি হয়ে রক্তে এসজিপিটির পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে। তাই রোগীকে বাড়তি মসলা ও তেলচর্বিযুক্ত খাবার না খাওয়ানো ভালো। তবে তার খাবারে পর্যাপ্ত আমিষ উপাদান থাকা জরুরি। এ জন্য তাকে মাছ, মুরগি, দুধ, ডিম প্রভৃতি উপকরণে তৈরি বিভিন্ন ধরনের খাবার খেতে দিতে হবে।