দক্ষ ও মূল্যবোধসম্পন্ন গ্রাজুয়েট তৈরিই আমাদের লক্ষ্য
অধ্যাপক ড. মো. গোলাম সামদানী ফকির। গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে দ্বিতীয় মেয়াদে নিয়োগপ্রাপ্ত উপাচার্য। গ্রিন ইউনিভার্সিটির যাত্রা শুরু সেই ২০০৩ সালে। হাঁটি হাঁটি পা পা করে চৌদ্দ বছরে পা রাখা এই বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যেই শিক্ষার মান উন্নয়নে সাফল্যের পরিচয় রেখেছে। সগৌরবে স্থান করে নিয়েছে প্রথম সারির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মাঝে। আর এই অর্জনের নায়ক হিসেবে সবচেয়ে বেশি যিনি প্রশংসার দাবিদার- তিনিই হলেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. গোলাম সামদানী ফকির। ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির সাবেক উপ-উপাচার্য ও প্রশিক্ষণ জগতের বরেণ্য এই শিক্ষাবিদ রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলরের নিয়োগ পেয়ে ২০১৩ সালের ১৬ মে থেকে ২০১৭ সালে ১৫ মে পর্যন্ত প্রথম মেয়াদে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করেন। দ্বিতীয় মেয়াদে এসে ২০১৭ সালের ৪ জুলাই থেকে আরও চার বছরের জন্য দায়িত্ব নেন তিনি। সম্প্রতি মিরপুর শেওড়াপাড়ায় অবস্থিত গ্রিন ইউনিভার্সিটিতে নিজ কার্যালয়ে বসে দেয়া এক স্বাক্ষাৎকারে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানান।
ড. গোলাম সামদানী ফকির বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্য সেবা দেয়া। আলোকিত মানুষ তৈরি করা। গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশও এক্ষেত্রে ভিন্ন নয়। মানসম্মত শিক্ষাদানের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের দক্ষ ও যোগ্য করে তোলাই গ্রিনের আসল উদ্দেশ্য। মূলত এ লক্ষ্যেই উন্নত ভৌত-কাঠামো ও পরিবেশ, অত্যাধুনিক ল্যাব এবং উচ্চতর ডিগ্রীধারী অধিক যোগ্যতা সম্পন্ন শিক্ষকদের সমন্বয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাদান পরিচালিত হচ্ছে। এই ধারা অব্যহত থাকলে অচিরেই এই প্রতিষ্ঠান দেশের অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবে বলেও প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, নতুন উচ্চতায় পৌঁছার জন্য সদা সচেষ্ট এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। অভিজ্ঞ-স্বনামধন্য শিক্ষকমণ্ডলী আর বিশ্বমানের শিক্ষা কারিকুলাম তো বটেই, দক্ষ প্রশাসন আর উন্নত ভৌত-অবকাঠামোও এই বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে উত্তোরত্তর।
প্রশ্ন: আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরুর প্রেক্ষাপট সম্পর্কে জানতে চাচ্ছি। বর্তমানে কেমন চলছে এই বিশ্ববিদ্যালয়?
ড. মো. গোলাম সামদানী ফকির: সময়টা ২০০৩ সাল। বেসরকারি উদ্যোগে ইনস্টিটিউট হিসেবে চলছিল আজকের গ্রিন ইউনিভার্সিটির কার্যক্রম। সে সময় তুলনামুলক মানসম্মত কিছু প্রতিষ্ঠানকে তৎকালীন বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়’র জন্য আবেদন করতে বলা হয়। মূলত সেই আবেদনের প্রেক্ষিতেই গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ’র পথচলা। প্রথমদিকে রাজধানীর ফার্মগেটে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হলেও ২০০৮ সাল থেকে ২২০/ডি রোকেয়া সরণিতে তিনটি ভবন নিয়ে নতুন উদ্যমে চালু করা হয়।
আরো একটা বিষয় উল্লেখ করতে হয়- প্রথমদিকে মঈনুল মালেক মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে এ বিশ্ববিদ্যায়ের যাত্রা শুরু হয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল- গণতান্ত্রিক ও নৈতিক মূল্যবোধ, আধুনিক বিজ্ঞান এবং সর্বোপরি বর্তমানের কর্মমুখী শিক্ষার সমন্বয়ে প্রণীত শিক্ষা কর্মসূচির আলোকে আমাদের দেশে প্রজন্ম পরম্পরায় শিক্ষিত, চরিত্রবান, সৎ, যোগ্য, লক্ষ্য অর্জনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ও সুন্দর মানসিকতাসম্পন্ন নাগরিক তৈরি করা; যারা দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে জাতির আর্থ-সামাজিক ও নৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। এসব উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের তাগাদা নিয়েই কেটে যায় এক দশক।
অবশেষ ২০১১ সালে ইউএস-বাংলা গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন গ্রিন ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। মূলত এরপর থেকেই গ্রিনের অগ্রযাত্রা। শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়টির ক্রমান্বয়ে যেমন মান বেড়েছে, তেমনি উন্নয়ত হয়েছে এর ভৌত অবকাঠামোগত দিক। শুধু তাই নয়, এই অগ্রযাত্রার প্রয়াস বর্তমানেও সুনামের সঙ্গে অব্যাহত রয়েছে।
অন্যদিকে গ্রিন ইউনিভার্সিটির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে বলতে গেলে প্রথমেই উল্লেখ করতে হয়- একটা উন্নতমানের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য মোট পাঁচটি বিষয়ের প্রয়োজন। এর মধ্যে রয়েছে-
১. মানসম্মত শিক্ষার্থী
২. যোগ্য ও অভিজ্ঞ শিক্ষকমণ্ডলী
৩. কোয়ালিটি কোর্স কারিকুলাম
৪. দক্ষ প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং
৫. উন্নত ভৌত অবকাঠামো
এখানে উল্লেখিত প্রত্যেকটি বিষয় ব্যাখার দাবি রাখে। আশা করি, এই ব্যাখার মাধ্যমেই ‘ বর্তমানে গ্রিন ইউনিভার্সিটির কেমন চলছে’ প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে।
প্রথমত
মানসম্মত শিক্ষার্থী পেতে গ্রিন ইউনিভার্সিটির সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ হলো- ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে নির্দিষ্ট জিপিএ পাওয়া ছাত্র-ছাত্রীরাই কেবল এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে। সেখান থেকে বাছাই করে নির্দিষ্ট সংখক আসনে শিক্ষার্থীদের ভর্তি করা হয়।
মানসম্মত শিক্ষার্থী নিশ্চিত করতে ‘স্টুডেন্ট মেন্টরশীপ প্রোগ্রাম’ও এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে নবাগত ছাত্র-ছাত্রীদের একাডেমিক ও প্রশাসনিক বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য সিনিয়র শিক্ষার্থীরা উপদেশ-পরামর্শ দিয়ে থাকেন। যে ধারা শিক্ষার্থীরা প্রথম বর্ষে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই শুরু হয়। এরপর ২য় সেমিস্টার থেকে শুরু হয় একাডেমিক এ্যাডভাইজিং। এর মাধ্যমে বিভাগীয় শিক্ষকরা ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে ‘ওয়ান টু ওয়ান’ যোগাযোগ করে থাকেন। যা পরবর্তী চার বছর পর্যন্ত চলতে থাকে।
এছাড়া ৬ সেমিস্টার পর যেসব শিক্ষার্থীদের সিজিপিএ ৩ দশমিক ৫ বা তার অধিক, তাদের নিয়ে ৭টি মডিউল সমৃদ্ধ এবং এক বছর মেয়াদি গ্রিন ইউনিভার্সিটি ইনিশিয়েটিভ ফর ফিউচার ট্রান্সফরমার (গিফট) নামক একটি প্রোগ্রামের মাধ্যমে কাজ করা হচ্ছে।
সুষ্ঠু ও নকলমুক্ত পরীক্ষা পরিচালনাও এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম কাজ। এ পদক্ষেপের আওতায় শিক্ষার্থীরা কোনোভাবেই যেন পরীক্ষায় দুর্নীতির আশ্রয় নিতে না পারে- সে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশেও গ্রিন ইউনিভার্সিটিতে ব্যাপক সামাজিক-সাংস্কৃতিক চর্চার সুব্যবস্থা রয়েছে। এজন্য গড়ে উঠেছে ১৭টি ক্লাব। এর মধ্যে ডিবেটিং ক্লাব, স্পোর্টস ক্লাব, কালচারাল ক্লাব, সিনে ক্লাব, ব্লাড ক্লাব, ইকো ওয়ারিয়র ক্লাব, স্যোসাল বন্ডিং ক্লাব, টেক্সটাইল ক্লাব, থিয়েটার ক্লাব, বিজনেস ক্লাব, মিডিয়া ক্লাব, ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাব, ল’ ক্লাব, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং সোসাইটি এবং বিজ্ঞান ও কম্পিউটার ক্লাবসহ বিভিন্ন ক্লাবের মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের সহশিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়াও রয়েছে উন্নত যন্ত্রপাতিসমৃদ্ধ ২৫টি ল্যাবরেটরি।
দ্বিতীয়ত
যোগ্য ও অভিজ্ঞ শিক্ষকমÐলী দ্বারা শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করতেও গ্রিন সদা সচেষ্ট। এ ক্ষেত্রে ফার্স্টক্লাসধারী বা তুলনামূলক অধিক যোগ্যদের লিখিত, প্রেজেন্টশন ও ভাইভা পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হয়। শুধু তাই নয়, নিয়োগদানের পর তাদের কোয়ালিটি উন্নয়নেও কাজ করে থাকে গ্রিন বিশ্ববিদ্যালয়।
শুধু তাই নয়, ‘কোয়ালিটি এডুকেশন’র জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেকটি বিভাগ তাদের শিক্ষকদের নিয়ে সাপ্তাহিক মিটিংয়ের আয়োজন করে থাকে। সেখানে কোর্স কারিকুলাম, বিভাগের আভ্যন্তরীণ বিষয়াদি ও শিক্ষাদান পদ্ধতি সংক্রান্ত আলোচনা করা হয়ে থাকে। যার ফলে বিভাগগুলো নতুন সব চিন্তা-ধারণার সঙ্গে সংযুক্ত থেকে আপডেট থাকতে পারে।
তৃতীয়ত
যুগোপযোগী ও বিশ্বমানের কোর্স কারিকুলাম নিশ্চিত করার জন্য গ্রিন ইউনিভার্সিটির প্রত্যেকটি বিভাগে পৃথক কোর্স কারিকুলাম কমিটি রয়েছে। যারা যুগপোযোগী কোর্স প্রণয়নের পাশাপাশি তা নিয়মিত আপডেট রাখতে সদা কাজ করেন।
চতুর্থত
দক্ষ প্রশাসনিক কর্মকতার দিক থেকে গ্রিন ইউনিভার্সিটি এগিয়ে। এজন্য কর্মকর্তাদের চাহিদার নিরিখে তাদের প্রয়োজনীয় জ্ঞান, দক্ষতা ও মূল্যবোধ অর্জনের উপযোগী প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়ে থাকে। এর মাধ্যমে একজন কর্মকর্তাকে কীভাবে তার কাজের উপযোগী করে তোলা যায় এবং কর্মক্ষেত্রে প্রত্যাশিত ফল লাভ করা যায়- সে বিষয়ে দিক-নির্দেশনা দেয়া হয়।
পঞ্চমত
ভৌত অবকাঠামোর বিষয়ে বলতে হয়- বর্তমানে মিরপুর শেওড়াপাড়ার তিনটি ভবনে এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। যা শীঘ্রই পূর্বাচল আমেরিকান সিটিস্থ স্থায়ী ক্যাম্পাসে চলে যাবে। সেখানেই সুবিশাল জায়গা আর সবুজে আচ্ছাদিত পরিবেশে আবাসিক শিক্ষার্থী হিসেবে পড়ালেখা করবেন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
এর বাইরেও শিক্ষার্থীদের যুগোপযোগী করে করে তুলতে গ্রিন ইউনিভার্সিটির স্বতন্ত্র কিছু বৈশিষ্ট রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেÑ
ইউনিভার্সিটির সব কোর্স-কারিকুলাম বিশেষজ্ঞ ও অভিজ্ঞ শিক্ষাবিদদের তত্ত্বাবধানে তৈরি, যা যুগের সঙ্গে সমন্বয় রেখে প্রয়োজনীয় পরিবর্ধন-পরিমার্জন করা হচ্ছে।
নর্থ আমেরিকাসহ যুক্তরাজ্য, ইউরোপ ও বাংলাদেশ থেকে উচ্চ ডিগ্রীপ্রাপ্ত ১৮৩জন শিক্ষক দ্বারা পাঠদান।
বিদেশের প্রসিদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ক্রেডিট ট্রান্সফারের সুবিধা।
ইউনিভার্সিটির ছাত্র-ছাত্রীদের বিনামূল্যে ইংরেজি ও কম্পিউটার শিক্ষা প্রদান।
আধুনিক লাইব্রেরি, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিক ক্লাসরুম, কম্পিউটার ও ইলেকট্রিক্যাল ল্যাব এবং সার্বক্ষণিক ওয়াইফাই ইন্টারনেটের সুবিধা।
গ্রিন ইউনিভার্সিটি ল্যাঙ্গুয়েজ সেন্টারের মাধ্যমে ভাষা শিক্ষাদানের পাশাপাশি ব্রিটিশ কাউন্সিলের প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ স্থাপন করে দেয়া।
প্রশ্ন: মেধাবী ও গরিব শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার জন্য আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ে কি কি সুবিধা রয়েছে?
অধ্যাপক ড. মো. গোলাম সামদানী ফকির: গ্রিন ইউনিভার্সিটি সব সময়ই গরীব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে সচেতন। এসব শিক্ষার্থীর পড়াশোনায় সহায়তার জন্য বিভিন্ন ধরণের পদক্ষেপ নেয়া হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে প্রথম পদক্ষেপ হলো- এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলের ওপর সর্বোচ্চ ১০০% পর্যন্ত স্কলারশিপ সুবিধা দেয়া হয়। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, ছাত্রী, ভাইবোন, স্বামী-স্ত্রী কোটায় আংশিক এবং জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের (ক্রিকেট) সম্পূর্ণ বিনা টিউশন ফিতে লেখাপড়ার সুযোগ দিচ্ছে গ্রিন ইউনিভার্সিটি। অপেক্ষাকৃত কম সচ্ছল ও মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে-মেয়েদের জন্য ১০০ভাগ পর্যন্ত টিউশন ফি মওকুফের ব্যবস্থা।
দ্বিতীয়ত, গরীব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য গ্রিন ইউনিভার্সিটির সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ হলো ‘স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার ফান্ড’ গঠন। আমার উদ্যোগে গড়া এই ফান্ডে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষক-কর্মকর্তারা মাসের শুরুতে নির্দিষ্ট পরিমান (সর্বনিম্ন ১০০টাকা থেকে শুরু) টাকা প্রতি মাসে দিয়ে থাকেন। গরীব ও মেধাবী শিক্ষার্থীরা প্রত্যেক সেমিস্টারে এই ফান্ড থেকে বৃত্তি পেয়ে থাকেন। আর পুরো এই বিষয়টি দেখভালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
প্রশ্ন; আমাদের দেশের উচ্চশিক্ষা শেষে অনেক শিক্ষার্থী বেকার হয়ে পড়ছে, এই বেকারত্ব সমস্যা সমাধানে আপনার পরামর্শ কি?
ড. মো. গোলাম সামদানী ফকির: বেকারত্ব দূরীকরণে প্রথমেই সরকারকে কারিগরি শিক্ষায় মননিবেশ করতে হবে। দ্বিতীয়ত, দেশিয় শিক্ষাব্যবস্থাকে বাজারমুখি (অর্থ্যাৎ যে শিক্ষার চাহিদা বাজারে রয়েছে) করতে হবে। এ দুটো বিষয় বাস্তবায়ন করলে বেকারত্বের হার অনেক কমে আসবে।
এ ক্ষেত্রে আরো যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ বলে আমি মনে করি, তা হলো- আমাদের দেশে কোন সেক্টরে কতজন লোক দরকার, জাতীয় পর্যায়ে সে সম্পর্কিত একটি নীতিমালা প্রণয়ন জরুরি। উদাহারণস্বরুপ- বাংলাদেশে কতজন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার, ইলেক্ট্রিক ইঞ্জিনিয়ার বা কতজন ডাক্তার প্রয়োজন, এ সম্পর্কিত একটি জরিপ থাকলে সহজেই গ্রাজুয়েট তৈরি এবং তাদের কর্মসংস্থান করা সম্ভব।
অন্যদিকে বিশ্বে এখন ‘প্রতিযোগিতার যুগ’ চলছে। একজন শিক্ষার্থী যে বিষয়েই স্নাতক বা স্নাতকোত্তর করুক না কেন- তাকে কম্পিউটারে দক্ষ হতে হবে। পাশাপাশি বাংলা বা ইংরেজি অর্থ্যাৎ ভাষাগত দক্ষতা, সমস্যা সমাধানকারী ও সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীর গুণাবলীও অর্জন করতে হবে। আমরা যদি শিক্ষার্থীদের এই কয়েকটি গুণ অর্জন করাতে পারি, তবে বেকারত্বের হার অনেকটাই কমে আসবে বলে আমি মনে করি।
আরো একটি বিষয় উল্লেখ্য যে, বেকারদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা ছাড়া দেশের আর্থসামাজিক ব্যবস্থার উন্নয়ন সম্ভব নয়- এটা যেমন সত্য। তেমনি শুধু সরকারি উদ্যোগে সব বেকারদের কর্মের সুযোগ করে দেয়াও অসম্ভব। এজন্য সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থাগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। সেই সঙ্গে গ্রাজুয়েটদেরও সরকারি চাকুরির আশায় বেকার না থেকে বেসরকারি কর্মের প্রতি ঝুঁকতে হবে।
সরকারি, বেসরকারি কিংবা স্ব-উদ্যোগ- যেকোনো উপায়ে শিক্ষিত বেকারদের কর্মের সুযোগ নিশ্চিত থাকতে হবে। তারা যাতে হতাশায় না ভুগে, বিপথে পা না বাড়ায়- সেদিকে সজাগ দৃষ্টি দিতে হবে। কারণ, বেকার জনগোষ্ঠী যদি সম্পদে পরিণত না হয়ে বোঝা হয়ে দাঁড়ায় তাহলে তা সমাজ এবং রাষ্ট্রের জন্যে মঙ্গলকর হবে না।
প্রশ্ন: বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে ২১ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় গ্রিন ইউনিভার্সিটি শিক্ষার্থীদের কীভাবে গড়ে তুলছে?
ড. মো. গোলাম সামদানী ফকির: ২১ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার দৌঁড়ে গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ সদা চেষ্টা করে যাচ্ছে। এজন্যই এ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা, সহ-শিক্ষাসহ আধুনিক অনেক বৈশিষ্ট্যে অনন্য। দেশীয় সংস্কৃতি, মূল্যবোধ ও নীতি বজায় রেখে আমেরিকান ক্রেডিট পদ্ধতিতে গুণগত মানসম্পন্ন শিক্ষা দেয়া হয়ে থাকে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাছাড়া ২১ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার অংশ হিসেবে ইতোমধ্যেই গ্রিন ইউনিভার্সিটির ডিগ্রী নিয়ে শত শত শিক্ষার্থী দেশে ও দেশের বাইরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
ছাত্র-শিক্ষক বিনিময় এবং যৌথ গবেষণা প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কানাডার ইউনিভার্সিটি অব রেজিনা, যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব হাডারস্ফিল্ড, চীনের বেইজিং ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যান্ড কালচারাল ইউনিভার্সিটি (বিএলসিইউ) এবং উহান টেক্সটাইল ইউনিভার্সিটির সঙ্গে এমওইউ ছাড়াও ঘনিষ্ট যোগাযোগ রয়েছে বিশ্বের নামকরা অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে। অর্জন করা হয়েছে বিশ্বের বিখ্যাত ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব ইউনিভার্সিটি প্রেসিডেন্ট ও অ্যাসোসিয়েশন অব ইউনিভার্সিটিজ ইন এশিয়া অ্যান্ড প্যাসিফিকের সদস্য পদ। এর বাইরেও এ প্রতিষ্ঠানের বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ও সংস্থার সঙ্গে যৌথ গবেষণার চুক্তি রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ প্রতিবেদন ও অভ্যন্তরীণ তথ্যমতে, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে প্রায় দুই’শ শিক্ষক পাঠদান করছেন।
প্রশ্ন: একজন আদর্শ ও দায়িত্ববান উপাচার্য হিসেবে শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি?
অধ্যাপক ড. মো. গোলাম সামদানী ফকির: প্রত্যেক শিক্ষা হলো সেই শিক্ষা, যে শিক্ষা মানুষকে পূর্ণাঙ্গ মানুষ হিসেবে তৈরি করে। এজন্য একজন শিক্ষার্থীকে সাবজেক্টিভ জ্ঞানের পাশাপাশি অবশ্যই মূল্যবোধ দ্বারা পরিচালিত হবে। সামাজিক সচেতনতাবোধসম্পন্ন হতে হবে। মূলত এই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই আমি গ্রিন বিশ্ববিদ্যালয়কে মানবিক ও আলোকিত মানুষ গড়ার প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। এজন্যই আমরা প্রতিনিয়ত ভিন্ন ভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করতে যাচ্ছি।
সর্বাপরি আমি ‘ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড’ বজায় রেখে গ্রিন ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের দক্ষ ও যোগ্য করে গড়ে তুলতে চাই। যে ধারা অব্যহত রেখে অচিরেই এই প্রতিষ্ঠানকে দেশের প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে রূপ দেয়ার প্রত্যাশা করছি।
Thank you for your sharing. I am worried that I lack creative ideas. It is your article that makes me full of hope. Thank you. But, I have a question, can you help me?
Thank you for your sharing. I am worried that I lack creative ideas. It is your article that makes me full of hope. Thank you. But, I have a question, can you help me?
Can you be more specific about the content of your article? After reading it, I still have some doubts. Hope you can help me.