Lifestyle

ওজন বৃদ্ধি, ক্যানসার-ডায়াবেটিক ছাড়াও চিনিতে মারাত্মক রোগ!

Reasons Why Sugar Is Bad for Your Health

সাদা চিনি যে কেবল ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য নিষেধ, তা–ই নয়, এখন দেখা যাচ্ছে যে সাদা চিনি উচ্চ সরল শর্করা ও উচ্চ ক্যালরিযুক্ত, এটা রক্তে শর্করার পাশাপাশি ওজনও বাড়ায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানাচ্ছে, প্রতিদিন ২৫ গ্রামের (৬ চামচ) বেশি চিনি খাওয়া আমাদের স্বাস্থ্যের পক্ষে মারাত্মক ক্ষতিকর! এর চেয়ে বেশি চিনি খেলে আমাদের শরীরে বাসা বাঁধতে পারে স্থুলতা, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগের মতো অসংক্রামক রোগ ব্যাধি। এছাড়া অকালে দাঁতের ক্ষয়, উদ্বেগ, অবসাদের মতো সমস্যাও বেড়ে যেতে পারে অত্যাধিক মাত্রায় চিনি খাওয়ার ফলে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানাচ্ছে, প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের ক্ষেত্রে প্রতিদিন সর্বাধিক ৩৭.৫ গ্রাম (৯ চামচ) এবং নারীদের ক্ষেত্রে প্রতিদিন সর্বাধিক ২৫ গ্রামের (৬ চামচ) চিনি খাওয়া যায়। ‘আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন’র রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২২ চামচ করে চিনি খাচ্ছে বিশ্ববাসী। ফলে বড় ধরনের বিপদের দিকে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছি আমরা।

পড়ুন: খালি পেটে এক কোয়া রসুন! তারপরই ম্যাজিক! আপনার ১২টি রোগের উপশম হবে।

বাড়তি চিনি রক্তে ও যকৃতে চর্বি বা ট্রাইগিস্নাসারাইড হিসেবে জমা হতে থাকে। ফ্যাটি লিভার, হৃদ্‌রোগসহ নানা রোগের ঝুঁকি বাড়ায় এই সাদা চিনি। শুধু তা–ই নয়, বিজ্ঞানীরা দেখেছেন যে চিনি আসলে অ্যাডিকটিভ, মানে এতে আসক্তি জন্মে। ফলে যাঁরা চিনি বা চিনি দিয়ে তৈরি মিষ্টি খেতে পছন্দ করেন, তাঁরা এতে ক্রমেই আসক্ত হয়ে পড়েন, পরে এ ধরনের খাবার আরও বেশি করে খেতে থাকেন। চিনিতে আছে উচ্চ শর্করা, যা খিদে ও রুচি আরও বাড়ায়, ফলে আরও খেতে ইচ্ছে করে। এই সব নানা কারণে সবারই উচিত সাদা চিনি ও চিনি দিয়ে তৈরি মিষ্টান্ন দ্রব্য এড়িয়ে চলা। কী কী ক্ষতি হতে পারে অতিরিক্ত চিনি খাওয়ার ফলে, দেখে নিন।

লিভারের ক্ষতি করে

চিনির গ্লুকোজ শরীর শোষণ করে নেয়। কিন্তু পরিষোধিত চিনিতে ফ্রুকটোজ বেশি থাকে। ফ্রুকটোজকে একমাত্র পরিশোধন করতে পারে লিভার। লিভারে গিয়ে এই ফ্রুকটোজ চর্বিতে পরিণত হয়। ফলে লিভার ক্ষতিগ্রস হয়। এছাড়াও, বেশি চিনি খেলে লিভার অতিরিক্ত কাজ করতে বাধ্য হয়।

পড়ুন: চুল পেকে যাচ্ছে? পাকা চুল কালো করার কয়েকটি ঘরোয়া টিপস

ডায়াবিটিসের জন্ম দেয়

ওজন ও ডায়াবিটিস বাড়াতে চিনির জুড়ি মেলা ভার! শরীরে খুদার মাত্রা নির্ণয় করে লেপটিন। কিন্তু অতিরিক্ত চিনি লেপটিন প্রতিরোধী ক্ষমতা তৈরি করে। পর্যাপ্ত খাবার খাওয়ার পরও খুদা থেকে যায়। ফলে, স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি খাওয়ার প্রবণতা তেরি হয়। ফলে দ্রুত বাড়তে থাকে ওজন। স্থূলতা ও ডায়াবিটিসের কারণে মস্তিষ্কের বিভ্রাট হওয়ারও ঝুঁকি থাকে।

কিডনির ক্ষতি করে

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেশি পরিমাণ চিনি বা মিষ্টিজাতীয় খাবার খাওয়া কিডনির জন্য একেবারেই ভালো নয়। কিডনিতে পাথরও তৈরি হতে পারে

পড়ুন: জেনে নিন অতিরিক্ত টেলিভিশন দেখলে মানুষের আয়ু কমে কেন?

হার্টের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে

২০১৪ সালে এই বিষয়ক হওয়া একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছিল যারা বেশি মাত্রায় চিনি বা মিষ্টি জাতীয় খাবার খান, তাদের হার্টের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কয়েক গুণ বৃদ্ধি পায়। শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যায়। কমে যায় ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা। হ্রদরোগে মৃত্যুর সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

দাঁতের ও মস্তিষ্কের ক্ষতি করে

দাঁতের এনামেল নষ্ট হয়ে যায়। চিনি ক্ষয়কারী ব্যাকটেরিয়াকে সজীব রাখে। মস্তিষ্কের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। চিনি কেবল দাঁতের ক্ষয় করে না, মস্তিষ্কেরও মারাত্মক ক্ষতি করে থাকে। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে বেশি মাত্রায় চিনি খেলে মস্তিষ্কের কগনিটিভ ফাংশন কমতে শুরু করে। সেই সঙ্গে স্মৃতিশক্তিও হ্রাস পায়। সেই কারণেই চিনি খাওয়ার বিষয়ে সাবধান থাকতে হবে। না হলে কিন্তু বিপদ হতে পারে।

ক্যানসার যুকি বাড়ায়

গবেষণায় দেখা গিয়েছে, মাত্রাতিরিক্ত চিনি খেলে প্যাংক্রিয়েটিক ক্যানসার, প্রস্টেট ক্যানসার, ক্ষুদ্রান্তের ক্যানসার, গলা, ফুসফুস, রেকটাম ও স্তন ক্যানসারের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

বাচ্চাদের বিভিন্ন শারিরিক সমস্যার সৃষ্টি করে

গবেষণা বলছে, বেশি চিনি বাচ্চাদের কাজ করার আগ্রহ নষ্ট করে দিতে পারে। শিশুদের মধ্যে দুশ্চিন্তা, মনোযোগের অভাব, উত্তেজনা বেড়ে যায়। অতিরিক্ত চিনি বাচ্চাদের শরীরে অ্যাড্রেনালিনের মাত্রা দ্রুত বাড়িয়ে দেয়। শিশুদের এগজিমা হওয়ারও সম্ভাবনা থাকে।

এছাড়াও দেহের বিভিন্ন হাড়ের সংযোগস্থলে, বিশেষ করে পায়ের হাড়ের ব্যথার অন্যতম কারণ চিনি। শরীরে পুষ্টির ভারসাম্য নষ্ট হয়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও খনিজ পদার্থের কার্যকারিতা কমে যায়। বেশি চিনি খেলে নারী ও পুরুষ, উভয়েরই যৌন জীবনে ক্ষতি হয়। দেখা দেয় ডিপ্রেশন। মাত্রা অতিরিক্ত চিনি খাওয়া রক্তে ইউরিক অ্যাসিড বৃদ্ধি পায়। বাড়িয়ে দেয় সি- পেপটাইডের ঘনত্বও।