বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনে আসছে বড় পরিবর্তন
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনে আসছে বড় পরিবর্তন
স্থায়ী সনদ না নিলে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ, আইন ভাঙলে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা!
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম আরও স্বচ্ছ ও সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনার লক্ষ্যে ২০১০ সালের ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন’ সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সংশোধিত আইনের খসড়ায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন প্রস্তাব করা হয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—স্থায়ী সনদ না পেলে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ, ব্যাংকে জমার পরিমাণ বৃদ্ধি, উপাচার্য নিয়োগে ২০ বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা বাধ্যতামূলক, এবং আইন লঙ্ঘনে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান।
স্থায়ী সনদ না নিলে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ
প্রতিটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে ৭ বছরের মধ্যে স্থায়ী সনদের জন্য আবেদন করতে হবে। ব্যর্থ হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিসহ সব কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। প্রথম মেয়াদ (৭ বছর) ও নবায়নের মেয়াদ (৫ বছর) মিলিয়ে সর্বোচ্চ ১২ বছরের মধ্যে স্থায়ী সনদ পেতে হবে।
ব্যাংকে জামানত বাড়ছে
ঢাকা ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটনে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদনের জন্য প্রস্তাবিত টাকার পরিমাণ বাড়িয়ে ৫ কোটি থেকে ৮ কোটি করা হয়েছে। অন্যান্য মেট্রোপলিটনে হবে ৫ কোটি টাকা এবং অন্যান্য এলাকায় ৩ কোটি টাকা।
স্থায়ী ক্যাম্পাসে জমির পরিমাণ ৫ একর
আগে যেখানে ১ থেকে ২ একর জমির বাধ্যবাধকতা ছিল, সেখানে এখন যেকোনো এলাকায় ৫ একর নিষ্কণ্টক জমির প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
উপাচার্য নিয়োগে কঠোর মানদণ্ড
উপাচার্য হতে হলে এখন থেকে স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০ বছর শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। শিক্ষাজীবনে তৃতীয় শ্রেণি প্রাপ্ত ব্যক্তিরা এই পদে অযোগ্য হবেন। এক ব্যক্তি দুই মেয়াদের বেশি ভিসি থাকতে পারবেন না। প্রো-ভিসি ও ট্রেজারার নিয়োগেও যোগ্যতায় পরিবর্তন আনা হচ্ছে।
আইন লঙ্ঘনে শাস্তি কঠোর হচ্ছে
বিদ্যমান আইনে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা জরিমানার পরিবর্তে সংশোধিত আইনে পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা ৫০ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
যৌন হয়রানি প্রতিরোধে বাধ্যতামূলক কমিটি
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি গঠন বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে, যা নিরাপদ ও সম্মানজনক শিক্ষা পরিবেশ নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, “আইনের সংশোধন প্রক্রিয়া চলমান এবং এখনও খসড়া চূড়ান্ত হয়নি।”
উল্লেখ্য, দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয় ১৯৯২ সালে। বর্তমানে এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১৬টি। সময় ও প্রেক্ষাপটের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ ও মান নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করতে আইন সংশোধনের এই উদ্যোগকে অত্যন্ত সময়োপযোগী বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।