চীন কেন বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক মোকাবিলায় সহায়তা করতে চায়?
ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক নীতিকে “আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা” হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং বাংলাদেশকে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তাঁর এই বক্তব্য বাংলাদেশ-চীন দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের গভীরতা এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক দ্বন্দ্বে চীনের অবস্থানকে স্পষ্ট করে তুলেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক নীতির বিরুদ্ধে চীনের অবস্থান
মঙ্গলবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে ডিপ্লোমেটিক করেসপনডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ডিকাব) আয়োজিত এক আলোচনায় চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক নীতি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) নীতিমালার লঙ্ঘন এবং এটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জন্য ক্ষতিকর। তিনি এটিকে “অযৌক্তিক, অন্যায্য ও অন্যায়” বলে অভিহিত করেন।
চীন মনে করে, যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ বৈশ্বিক বাণিজ্যে আধিপত্য ধরে রাখার কৌশল মাত্র। রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেন, “চীন যুক্তরাষ্ট্রের এই একতরফা শুল্ক নীতির বিরোধিতা করে এবং এর ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশকে সহায়তা করতে প্রস্তুত।”
বাংলাদেশকে সহায়তার প্রতিশ্রুতি
২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশ (LDC) তালিকা থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের প্রেক্ষাপটে চীন বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক সহায়তা দেওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে। রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন জানান, বাংলাদেশ ২০২৮ সাল পর্যন্ত চীনের বাজারে শতভাগ শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে, যা দেশটির রপ্তানি খাতকে শক্তিশালী করবে।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, চীন বাংলাদেশের রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণ ও উৎপাদন দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহযোগিতা করবে, যাতে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক নীতির নেতিবাচক প্রভাব কাটিয়ে উঠতে পারে বাংলাদেশ।
চীন-বাংলাদেশ বাণিজ্যিক সম্পর্কের সম্ভাবনা
চীনের এই উদ্যোগ কৌশলগত ও অর্থনৈতিক উভয় দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ ইতিমধ্যে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (BRI)-এর সাথে যুক্ত রয়েছে এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগে চীনের সাথে সম্পর্ক জোরদার করার চেষ্টা করছে। যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক চাপের মুখে বাংলাদেশের জন্য চীনের বাজার আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।
সামগ্রিক প্রভাব ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক নীতির বিরুদ্ধে চীনের অবস্থান এবং বাংলাদেশকে দেওয়া সহায়তার প্রতিশ্রুতি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ভারসাম্যে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে। বাংলাদেশ যদি চীনের সহায়তাকে কার্যকরভাবে কাজে লাগাতে পারে, তবে তা দেশটির রপ্তানি খাতের জন্য একটি বড় সুযোগ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
চীনের এই উদ্যোগ বাংলাদেশের জন্য একটি কৌশলগত সুযোগ তৈরি করেছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক চাপ মোকাবিলায় সাহায্য করবে এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করতে পারে।